মানুষের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ কমাতে ও হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে বিটরুট পাউডার এর উপকারিতা রয়েছে। বিটরুট পাউডার কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ, টক্সিন দূর করা সহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অসাধারন কাজ করে।
বিটরুট পাউডার বিটরুটের পুষ্টিগুণ, স্বাস্থ্য উপকারিতা, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহ বিভিন্ন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
বিটরুট (Beetroot) হলো এক ধরনের সবজি, যা মূলত বিট (Beet) উদ্ভিদের মূল অংশ। এটি সারা বিশ্বে পুষ্টিকর খাবার হিসেবে পরিচিত এবং এর গাঢ় লাল বা বেগুনি রঙের জন্য জনপ্রিয়। বিটরুট শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত এবং এটি কাঁচা, রান্না করা বা রস হিসেবে খাওয়া যায়।
বৈজ্ঞানিক নাম:
Beta vulgaris
বিটরুটের রঙ ও স্বাদ:
- বিটরুটের রঙ সাধারণত গাঢ় লাল, বেগুনি বা কখনও সোনালি (গোল্ডেন বিট) হয়।
- এর স্বাদ হালকা মিষ্টি এবং মাটির মতো (Earthy Flavor) অনুভূত হয়।
বিটরুটের পুষ্টিগুণ:
বিটরুট পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এবং এতে রয়েছে:
- ফাইবার: হজমে সহায়তা করে।
- আয়রন: রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে।
- ফোলেট (ভিটামিন বি৯): কোষ বিভাজন ও পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
- পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে।
বিটরুটের স্বাস্থ্য উপকারিতা:
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য:এতে থাকা নাইট্রেট রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করে রক্তচাপ কমায়।
- রক্ত তৈরি:আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি রক্তশূন্যতা কমাতে কার্যকর।
- শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি:অক্সিজেন সরবরাহ উন্নত করে শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষমতা বাড়ায়।
- লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি:বিটরুট লিভারকে ডিটক্সিফাই করে।
- হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা:এটি রক্তনালীর কর্মক্ষমতা উন্নত করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
কীভাবে বিটরুট খাওয়া যায়?
- কাঁচা সালাদ হিসেবে।
- জুস করে।
- স্যুপ বা তরকারিতে।
- ভাপিয়ে বা রান্না করে।
- পাউডার আকারে, স্মুদি বা পানীয়তে মিশিয়ে।
- বিটরুট একটি প্রাকৃতিক সুপারফুড, যা স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত উপকারী।
বিটরুট পাউডার
বিটরুট পাউডার হলো শুকনো বিটরুট থেকে তৈরি একটি প্রাকৃতিক পাউডার, যা সাধারণত বিটরুট শুকিয়ে বা ডিহাইড্রেট করে গুঁড়ো আকারে প্রস্তুত করা হয়। এটি বিটরুটের পুষ্টিগুণ বজায় রেখে সহজে ব্যবহারের উপযোগী একটি রূপ। বিটরুট পাউডার দেখতে গাঢ় লাল বা গোলাপি রঙের হয় এবং এতে বিটরুটের প্রাকৃতিক স্বাদ ও গন্ধ বিদ্যমান। এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সুবিধার জন্য জনপ্রিয়।
বিটরুট পাউডারের সাধারণ ব্যবহার:
- পুষ্টিকর পানীয়:এটি স্মুদি, জুস বা পানীয় তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
- খাদ্য রঙ:প্রাকৃতিক লাল রঙ যোগ করতে এটি কেক, পাস্তা, বা অন্যান্য খাবারে ব্যবহার করা যায়।
- পুষ্টি বৃদ্ধি:স্যুপ, সালাদ ড্রেসিং, বা সসের মতো খাবারে পুষ্টি যোগ করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।
- স্বাস্থ্য ও ফিটনেস:শরীরচর্চার আগে বা পরে এনার্জি বৃদ্ধির জন্য এটি প্রোটিন শেকের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়।
- বিটরুট পাউডারের পুষ্টিগুণ:এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এটি শরীরে রক্ত প্রবাহ উন্নত করে, কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং লিভার ও হার্টের জন্য উপকারী।
এটি মূলত তাজা বিটরুটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং সহজে সংরক্ষণ করা যায় বলে বেশ জনপ্রিয়।

বিটরুট পাউডার এর উপকারিতা
বিটরুট পাউডার এর উপকারিতা ও অপকারিতা
বিটরুট পাউডার (Beetroot Powder) হলো শুকনো বিটরুট থেকে তৈরি এক ধরনের পাউডার, যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। নিচে এর উপকারিতা ও অপকারিতা তুলে ধরা হলো:
বিটরুট পাউডার এর উপকারিতা:
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা:বিটরুট পাউডারে থাকা নাইট্রেট শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়, যা রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
- শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ায়:এটি রক্তে অক্সিজেন পরিবহন প্রক্রিয়া উন্নত করে, ফলে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের সময় কর্মক্ষমতা বাড়ে।
- পুষ্টি সরবরাহ:এতে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ:বিটরুটে থাকা বেটালেইন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে টক্সিন দূর করে ও কোষের ক্ষতি রোধ করে।
- লিভারের জন্য ভালো:লিভারকে ডিটক্সিফাই করতে বিটরুট সাহায্য করে, ফলে লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
বিটরুট পাউডার এর অপকারিতা:
- পেটের সমস্যা:অতিরিক্ত বিটরুট পাউডার খেলে ডায়রিয়া বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত শর্করা:বিটরুটে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, যা বেশি খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- রক্তচাপ অত্যধিক কমানো:যাদের রক্তচাপ আগে থেকেই কম, তাদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
- বিটুরিয়া (Beeturia):অনেক ক্ষেত্রে বিটরুট পাউডার খাওয়ার পর প্রস্রাব বা মল লালচে হতে পারে, যা কিছু মানুষের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে (যদিও এটি ক্ষতিকারক নয়)।
- এলার্জি:কারও কারও ক্ষেত্রে বিটরুট পাউডার থেকে অ্যালার্জি হতে পারে, যেমন চুলকানি বা ত্বকে র্যাশ।
ব্যবহারের সতর্কতা:
- প্রতিদিন ১-২ চা চামচের বেশি খাওয়া উচিত নয়।
- যদি কোনো বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, যেমন ডায়াবেটিস বা হাইপোটেনশন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এটি খাওয়া উচিত।
বিটরুট পাউডার খাওয়ার নিয়ম
বিটরুট পাউডার খাওয়ার নিয়ম নির্ভর করে আপনার লক্ষ্য এবং ব্যবহারের উদ্দেশ্যের ওপর। এটি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় এবং প্রতিদিনের ডোজ সাধারণত ১-২ চা চামচ পরিমাণে নিরাপদ।
বিভিন্ন উপায়ে বিটরুট পাউডার এর উপকারিতা পেতে খাওয়ার নিয়ম:
- পানীয় বা স্মুদি হিসেবে:১-২ চা চামচ বিটরুট পাউডার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করুন।স্মুদি বানানোর সময় এটি দুধ, দই বা অন্যান্য ফলের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- চা বা গরম পানীয়:এক কাপ গরম পানিতে ১ চা চামচ বিটরুট পাউডার মিশিয়ে চা হিসেবে পান করতে পারেন।
- খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে:স্যুপ, সালাদ, পাস্তা বা তরকারির মধ্যে বিটরুট পাউডার মিশিয়ে খাওয়া যায়।এটি কেক, ব্রেড বা প্যানকেকের মতো বেকড খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে স্বাদ ও রঙ যোগ করতে পারেন।
- ব্যায়ামের আগে বা পরে:যারা শরীরচর্চা করেন, তারা প্রাক-ওয়ার্কআউট ড্রিংক হিসেবে পান করতে পারেন।ব্যায়ামের পর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এটি প্রোটিন শেক বা স্মুদির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
- সরাসরি খাওয়া (ক্যাপসুল হিসেবে):কিছু বিটরুট পাউডার ক্যাপসুল আকারে পাওয়া যায়। সেগুলো নির্দেশনা অনুযায়ী পানি দিয়ে খেতে পারেন।
প্রতিদিনের ডোজ:
- শরীরের স্বাস্থ্য রক্ষায়: ১-২ চা চামচ (প্রায় ৫-১০ গ্রাম)।
- উচ্চ রক্তচাপ বা বিশেষ উদ্দেশ্যে: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
- অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার দরকার নেই, কারণ এটি শর্করা এবং প্রাকৃতিক নাইট্রেট সমৃদ্ধ।
সতর্কতা:
- পানির সঙ্গে মিশিয়ে ভালোভাবে মিশান, যেন দানাদার না থাকে।
- খালি পেটে খেলে অনেকের গ্যাস্ট্রিক হতে পারে, সেক্ষেত্রে খাবারের পরে খান।
- ডায়াবেটিস বা রক্তচাপের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
- অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া বা বিটুরিয়া (লাল প্রস্রাব বা মল) হতে পারে। এটি ক্ষতিকর নয়, তবে নিয়ম মেনে খাওয়াই ভালো।
বিটরুট পাউডার কোথায় পাওয়া যায়?
বিটরুট পাউডার বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া যায়, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি সাধারণত নিম্নলিখিত জায়গাগুলোতে পাওয়া যায়:
সুপারশপ ও স্বাস্থ্যসচেতন দোকানগুলোতে:
সুপারশপ: দেশের বড় সুপারশপ যেমন Agora, Shwapno, Meena Bazar, ইত্যাদিতে বিটরুট পাউডার পাওয়া যেতে পারে।
অর্গানিক পণ্য বিক্রেতা: যারা অর্গানিক বা স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করে, তারা সাধারণত বিটরুট পাউডার রাখে।
ফার্মেসি বা নিউট্রিশন স্টোর:
অনেক ফার্মেসি বা স্বাস্থ্যসচেতন পণ্যের দোকানে বিটরুট পাউডার পাওয়া যায়, বিশেষ করে যেসব দোকানে প্রোটিন পাউডার বা সুপারফুড বিক্রি হয়।
অনলাইন মার্কেটপ্লেস:
অনলাইনে বিটরুট পাউডার সহজে পাওয়া যায়। কিছু জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস হলো:
বাংলাদেশে:
Daraz
Chaldal
আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস (যদি বিদেশ থেকে আনতে চান):
eBay
স্থানীয় বাজার বা হোমমেড বিক্রেতা:
অনেক উদ্যোক্তা বা হোমমেড পণ্য প্রস্তুতকারক অর্গানিক বিটরুট পাউডার তৈরি করে বিক্রি করেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
- গুণগত মান পরীক্ষা করুন: কেনার আগে এটি খাঁটি এবং প্রিজারভেটিভমুক্ত কিনা নিশ্চিত করুন।
- সার্টিফিকেশন দেখুন: বিশেষত যদি এটি অর্গানিক পণ্য হয়।
- মেয়াদ দেখুন: বিটরুট পাউডারের তাজা ও কার্যকর গুণ নিশ্চিত করতে মেয়াদ যাচাই করুন।
- আপনার এলাকায় নির্দিষ্ট দোকানে না পেলে অনলাইনে অর্ডার করাই সহজ হবে।

বিটরুট পাউডার
হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য বিটরুট কীভাবে উপকারী?
বিটরুট পাউডার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এটি মূলত বিটরুটে থাকা পুষ্টিগুণ, বিশেষ করে প্রাকৃতিক নাইট্রেট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাধ্যমে কাজ করে। নিচে বিটরুট পাউডারের কার্যপ্রণালি বর্ণনা করা হলো:
- রক্তচাপ কমায়:বিটরুট পাউডারে থাকা প্রাকৃতিক নাইট্রেট শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়।
- নাইট্রিক অক্সাইড: রক্তনালীগুলোকে শিথিল করে এবং প্রসারিত করে, ফলে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক হয় এবং রক্তচাপ কমে।
উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ, তাই এটি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে:
- নাইট্রিক অক্সাইড রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং হৃদযন্ত্রে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়।
- এটি হৃদযন্ত্রের উপর অতিরিক্ত চাপ কমায় এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে।
প্রদাহ কমায়:
- বিটরুটে থাকা বেটালেইন (Betalain) নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ আর্টারির ক্ষতি করতে পারে এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
- প্রদাহ কমিয়ে এটি আর্টারিগুলোকে সুস্থ রাখে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে:
- বিটরুট পাউডারে থাকা ফাইবার শরীরের এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) কমাতে সাহায্য করে।
- এটি এইচডিএল (ভালো কোলেস্টেরল) বাড়ায়, যা আর্টারির ব্লকেজ প্রতিরোধে সহায়ক।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়:
- বিটরুটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেটানিন ও ভিটামিন সি কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়।
- অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই এটি কমিয়ে হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।
রক্তের জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে:
- নাইট্রিক অক্সাইড রক্ত পাতলা করতে সাহায্য করে এবং প্লেটলেটের অস্বাভাবিক জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে।
- এটি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা:
- বিটরুট পাউডার কম ক্যালোরিযুক্ত এবং ফাইবার সমৃদ্ধ, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
- অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
কীভাবে খাওয়াবেন হৃদরোগ প্রতিরোধে?
- প্রতিদিন ১-২ চা চামচ বিটরুট পাউডার পানির সঙ্গে বা স্মুদিতে মিশিয়ে খান।
- ব্যায়ামের আগে এটি খেলে রক্তপ্রবাহ ও কর্মক্ষমতা বাড়বে।
- দীর্ঘস্থায়ী ফল পেতে এটি নিয়মিত সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে গ্রহণ করুন।
সতর্কতা:
- রক্তচাপ বেশি কমে যাওয়ার সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- ডায়াবেটিস বা রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা থাকলে সাবধান থাকুন।
ফ্যাটি লিভার রোধ কমাতে বিটরুট পাউডার কীভাবে কাজ করে?
বিটরুট পাউডার ফ্যাটি লিভার (Fatty Liver) রোধ ও প্রতিকার করতে সহায়ক। এটি লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং ফ্যাট জমা প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিটরুটে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ডিটক্সিফাইং উপাদান লিভারের সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ফ্যাটি লিভার রোধে বিটরুট পাউডারের কার্যপ্রণালী:
- লিভার ডিটক্সিফিকেশন:বিটরুটে থাকা বেটালেইন (Betalain) একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা লিভার থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।এটি লিভার কোষের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং ফ্যাট জমা প্রতিরোধ করে।
- চর্বি বিপাকে সহায়তা:বিটরুট পাউডার লিভারের ফ্যাট ভাঙার প্রক্রিয়াকে (Fat Metabolism) সক্রিয় করে।এতে থাকা বিটাইন (Betaine) লিভারের ফ্যাট জমা কমাতে সাহায্য করে এবং এটি ভাঙতে সহায়তা করে।
- প্রদাহ কমায়:ফ্যাটি লিভার সমস্যার অন্যতম কারণ হলো লিভারে প্রদাহ।বিটরুটে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান লিভারের প্রদাহ কমিয়ে লিভার সুস্থ রাখে।
- অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়:বিটরুটে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভার কোষকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে।
- অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে এটি লিভারের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- লিভারের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে:বিটরুট পাউডারে থাকা প্রাকৃতিক নাইট্রেট লিভারে রক্ত প্রবাহ উন্নত করে।এটি লিভারে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করে।
- ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি:ফ্যাটি লিভার সমস্যার পেছনে ইনসুলিন প্রতিরোধের (Insulin Resistance) ভূমিকা থাকে বিটরুট পাউডার ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে, যা ফ্যাট জমা প্রতিরোধে সহায়ক।
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে বিটরুট পাউডার খাওয়ার নিয়ম:
- পানীয়: প্রতিদিন ১-২ চা চামচ বিটরুট পাউডার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করুন।
- স্মুদি: বিটরুট পাউডার ফল বা সবজির স্মুদিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- খাবারের সঙ্গে: সালাদ, স্যুপ বা রান্নায় এটি ব্যবহার করুন।
- ব্যায়ামের আগে: ফ্যাট বিপাক বাড়াতে ব্যায়ামের আগে পান করুন।
সতর্কতা ও পরামর্শ:
- পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ: অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ: দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগ থাকলে এটি গ্রহণের আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
- সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন: ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণ, ও ব্যায়াম অপরিহার্য।
বিটরুট পাউডার কীভাবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ?
বিটরুট পাউডার উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension) নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিকভাবে কাজ করে। এর মূল কার্যকারিতা নিহিত রয়েছে বিটরুটে থাকা প্রাকৃতিক নাইট্রেট (Nitrate) উপাদানে, যা রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
- নাইট্রেট থেকে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি:বিটরুট পাউডারে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত নাইট্রেট শরীরে প্রবেশ করার পর এটি নাইট্রিক অক্সাইডে (Nitric Oxide) রূপান্তরিত হয়।
- নাইট্রিক অক্সাইড:রক্তনালীগুলোকে শিথিল (Relax) করে।রক্তনালীর প্রসারণ ঘটায় (Vasodilation)।রক্ত প্রবাহ সহজ করে এবং রক্তচাপ কমিয়ে আনে।
- রক্তনালীর কার্যকারিতা উন্নত করে:বিটরুট পাউডার আর্টারি বা রক্তনালীর কার্যকারিতা উন্নত করে।আর্টারির স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।
- প্রদাহ কমায়:বিটরুটে থাকা বেটালেইন (Betalain) নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমায়।প্রদাহ আর্টারির সংকোচন ঘটায়, যা রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। বিটরুট পাউডার প্রদাহ কমিয়ে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে।
- অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়:উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ হলো অক্সিডেটিভ স্ট্রেস।বিটরুটে থাকা ভিটামিন সি, বেটানিন এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে আর্টারি সুরক্ষিত রাখে।রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেমের ওপর প্রভাব:রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।বিটরুট পাউডার প্রাকৃতিকভাবে এই সিস্টেমকে প্রভাবিত করে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
- পটাসিয়ামের ভূমিকা:বিটরুট পাউডারে পটাসিয়াম থাকে, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করতে সাহায্য করে।এটি রক্তচাপ কমানোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া।কীভাবে বিটরুট পাউডার গ্রহণ করবেন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে?
পানীয়:
- প্রতিদিন ১-২ চা চামচ বিটরুট পাউডার পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করুন।
- সকালে খালি পেটে বা দুপুরে এটি গ্রহণ করতে পারেন।
স্মুদি বা জুস:
- বিটরুট পাউডার ফল বা সবজির স্মুদিতে মিশিয়ে পান করুন।
প্রাক-ওয়ার্কআউট ড্রিঙ্ক:
ব্যায়ামের আগে বিটরুট পাউডার পান করুন, যা রক্তপ্রবাহ উন্নত করবে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
সতর্কতা
- অতিরিক্ত গ্রহণ করবেন না: বিটরুট পাউডার অতিরিক্ত খেলে রক্তচাপ খুব কমে যেতে পারে।
- ওষুধের সঙ্গে যোগাযোগ: যদি রক্তচাপের ওষুধ খেয়ে থাকেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিটরুট পাউডার গ্রহণ করুন।
বিটুরিয়া (লাল প্রস্রাব): এটি সাধারণ এবং ক্ষতিকর নয়, তবে অতিরিক্ত বিটরুট খেলে হতে পারে।
উপসংহার
বিটরুট মানুষের জন্য যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর অপকারিতা ও রয়েছে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটি ব্যবহার করলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পেটের সমস্যা ও এলার্জি এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আমাদের বিটরুট পাউডার এর উপকারিতা কাজে লাগাতে হবে।